অর্থঋণ মামলার বিচার পদ্বতির বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ ।

অর্থঋণ মামলার বিচার পদ্বতির বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ ।

 

অর্থঋণ মামলার বিচার পদ্বতির বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ । অর্থঋণ মামলার বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থঋণ আইন । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ । জারি মামলা কি । অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ অনুযায়ী মামলা কোন আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য ।
অর্থঋণ মামলার বিচার পদ্বতির বিভিন্ন ধাপ সমূহ



অর্থঋণ মামলার বিচার পদ্বতির বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ । অর্থঋণ মামলার বিভিন্ন ধাপ সমূহ । অর্থঋণ আইন । অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ । জারি মামলা কি । অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ অনুযায়ী মামলা কোন আদালত কর্তৃক বিচারযোগ্য ।


১) প্রথ‌মে Bank বা Non-Banking Financial Institution গ্রাহক‌কে ঋণ প‌রি‌শো‌ধের জন্য অনুরোধ বা প্রেসার করিবে। ২) অনুরোধ বা প্রেসার করিয়া কাজ না হ‌লে ৭(সাত) দিন সময় দি‌য়ে ‌ডিমান্ড নো‌টিস দি‌তে হ‌ইবে।
৩) তারপরেও য‌দি কাজ না হয়, ত‌বে মামলা দা‌য়ের করিতে অফিসিয়াল অনুমতি নিতে হইবে।

এখানে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর অধীনে মামলার কিছু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রের বিচার পদ্ধতি তুলে ধরা হইয়াছে, আর যেই সব ক্ষেত্রের বিচার পদ্ধতির বর্ণনা পাওয়া যায় না সেই সব ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধি প্রয়োগ করা হয়।

মামলার বাদি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই আইনের ৮ নম্বর ধারা মোতাবেক আরজি দাখিল এর মাধ্যমে মামলা দায়ের করিবে। আরজির সাথে সকল দালিলিক প্রমাণাদি দাখিল করিতে হইবে ও আরজির বক্তব্য ও দালিলিক প্রমাণাদির সমর্থনে একটি হলফনামা আরজির সাথে যুক্ত করিতে হইবে। সেই সাথে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করিতে হইবে। আরজিটি যথাযথ হইলে অর্থঋণ মামলা হিসেবে নির্ধারিত রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত হইবে।

এখানে উল্লেখ্য, যে ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়, সেই ক্ষেত্রে বাদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই মামলা দায়েরের পূর্বে ধারা ১২ এর বিধান মোতাবেক বন্ধককৃত সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের চেষ্টা করিতে হইবে। বিবাদী মূল ঋণ গ্রহীতা বা  ঋণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা বা তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টরকেও বিবাদী শ্রেণিভুক্ত করিতে হইবে। বিবাদী অথবা বিবাদীদের প্রতি সমন জারি করিতে হইবে। আইনের ৭ নম্বর ধারায় সরাসরি বা বিকল্প পদ্ধতি এবং অতিরিক্ত সমন জারির বিধান বর্ণিত রহিয়াছে। সমন জারির পরে, বিবাদীগণ ৯ ধারা মোতাবেক এবং ১০ ধারায় বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে লিখিত-জবাব দাখিল করিবে ও মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে পারিবে। বিবাদী লিখিত জবাব এর সঙ্গে দালিলিক প্রমাণাদি ও সেই সঙ্গে একটি হলফনামা দাখিল করিতে হইবে। যদি নির্ধারিত সময় এর মধ্যে বাদী লিখিত জবাব প্রদান না করে তাহইলে একতরফাভাবে মামলা নিষ্পত্তি হইয়া যাইবে।


বাদী ১১ ধারা মোতাবেক লিখিত জবাব এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জবাব দাখিল করিতে পারিবে, কিন্তু বিবাদীর অতিরিক্ত জবাব দাখিলের কোনো সুযোগ নেই। ১৩(১) ধারা মোতাবেক লিখিত জবাব দাখিল এর পর আদালত উভয়পক্ষকে মৌখিক শুনানি শেষে কিংবা তাদের অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার্য বিষয় গঠন করিবে। আর বিচার্য বিষয় না থাকিলে আদালত অবিলম্বে রায় প্রদান করিবেন। তবে আদালত মৌখিক যুক্তিতর্ক শুনতে বাধ্য নন। সাক্ষ্য সমাপ্ত হইবার ১০(দশ) দিনের মধ্যে রায় প্রদান করার বিধান রহিয়াছে আইনের ১৬ ধারা মোতাবেক।


অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর বিবাদী উপস্থিত হইলে মধ্যস্থতা বাধ্যতা মূলক করা হইয়াছে ২২ ধারা মোতাবেক, বিবাদী জবাব দাখিল এর পর আদালত এর সহায়তায় মধ্যস্থতার বিধান রহিয়াছে এবং ইহা ছাড়াও ৩৮ ধারা মোতাবেক জারির পর্যায়ে মধ্যস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান রহিয়াছে।


অর্থঋণ আদালত এর রায়, আদেশ বা ডিক্রি চূড়ান্ত ও এই রায়, আদেশ বা ডিক্রির বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না। আদালত এর আদেশ বা রায়ে ডিক্রিকৃত টাকা ৬০(ষাট) দিনের মধ্যে যে কোনো একটা সময়সীমা নির্ধারণ করে তার মধ্যে পরিশোধ এর জন্য বিবাদীকে নির্দেশ প্রদান করিবেন। আইনের ১৭ ধারা মোতাবেক মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হইয়াছে যা বিবাদী হাজির হলে ৯০(নব্বই) দিন ও হাজির না হলে ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করিতে হইবে। তবে যথাযথ কারণ থাকলে ৯০(নব্বই) দিনের সঙ্গে আরও ৩০৯ত্রিশ) দিন যোগ করা যাইবে। সময়ের হিসাব গণনার বিধান রয়েছে ৪৮ ধারায়। একতরফা ডিক্রি প্রদান ও রদের বিধান বর্ণিত হয়েছে ১৯ ধারায়।

ডিক্রি জারির বিধান বর্ণিত হইয়াছে ২৬ হইতে ৩৯ ধারা মোতাবেক, অর্থঋণ মামলার ডিক্রি মূলত টাকা আদায় এর ডিক্রি, তবে এই ডিক্রি জারি সংক্রান্ত নিলাম অথবা গ্রেফতার অথবা দেওয়ানি আটক ইত্যাদির বিষয়ে কিছু কিছু বিধানাবলি সংযোজন করা হইয়াছে। ডিক্রি জারির কার্যক্রম এর ক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ ও দেওয়ানি কার্যবিধির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে অর্থঋণ আদালত আইনই প্রাধান্য পাইবে।

বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রির ডিক্রি জারি করা যাইবে বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম বিক্রির মাধ্যমে ও টাকার ডিক্রি জারি করা যায় দায়িককে দেওয়ানি কয়েদে আটক রাখার মাধ্যমে বা তার সম্পত্তি ক্রোক ও নিলাম বিক্রির মাধ্যমে অথবা উভয় পদ্ধতির মাধ্যমে। জারি মামলায় তৃতীয় পক্ষ দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের বিধান মোতাবেক দাবি সম্বলিত আবেদন পেশ করিলে ৩২(২) ধারা মোতাবেক ডিক্রির অনাদায়ী অংশের ১০% জমা প্রদান করিলে ৩২ ধারার বিধান মোতাবেক আদালত বিবেচনা করিলে এই আবেদন মিস মামলা হিসেবে রেজিস্ট্রিভুক্ত হইবে।


৪১ ও ৪২ ধারায় যথাক্রমে আপিল এবং রিভিশনের বিধানাবলি বর্ণিত রহিয়াছে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা যাইবে, তবে অর্থঋণ আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাইবে না, সে ক্ষেত্রে রিট মামলা দায়ের করা যাইবে। আপিল অথবা রিভিশনের যে কোনো পর্যায়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করা যাইবে, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আদালতকে অবহিত করিতে হইবে।


অর্থঋণ আদালত এর রায় ও আদেশ অথবা ডিক্রি সকল বিবাদিগণ এর বিরুদ্ধে যৌথ এবং পৃথকভাবে কার্যকর হইবে। ডিক্রি জারির মামলা সব বিবাদি দায়িকের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে পরিচালিত হইবে। কাউকে বাদ দেওয়া যাইবে না। ডিক্রি জারির মাধ্যমে দাবি আদায় হওয়ার ক্ষেত্রে আদালত প্রথমে মূল ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করিবেন। মূল ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তির পরও যদি দাবি আদায় না করা যায় তাহইলে তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা এবং তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টরের সম্পত্তি যতদূর সম্ভব আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা করিতে হইবে। তৃতীয় পক্ষ বন্ধকদাতা এবং তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টর যদি দাবি পরিশোধ করে তাহইলে ডিক্রি তাদের অনুকূলে স্থানান্তরিত হইবে ও তারা মূল ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করিতে পারিবেন।

Post a Comment

0 Comments