স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন । ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম ।

স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন । ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম ।


স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন ।  ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম । Special Marriage Act । বিশেষ বিবাহ আইন ।  বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক । বাংলাদেশের বিশেষ বিবাহ আইন ।
স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন


স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন ।  ভিন্ন ধর্মে বিয়ে করার নিয়ম । Special Marriage Act । বিশেষ বিবাহ আইন ।  বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক । বাংলাদেশের বিশেষ বিবাহ আইন ।

 

স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহের নিয়ম-কানুন?

একজন মুসলিম ছেলে অথবা অন্য ধর্মের ছেলে এবং একজন হিন্দু অথবা খ্রিষ্টান অথবা  অন্য ধর্মের মেয়ের মধ্যে বিবাহ হইবে, অর্থ্যাৎ ভিন্ন ধর্মের দুইজন মানুষ বিবাহ করিতে চায় এবং কেউই বিবাহের জন্য তাহার ধর্ম পরিবর্তন করিতে চায় না। প্রত্যেকটা মানুষের বিবাহ তিনি যেই ধর্ম অনুসরণ করেন, সে ধর্ম মোতাবেক হইয়া থাকে, কিন্তু ভিন্ন ধর্মে বিবাহ করিলে সেই বিবাহকে বিশেষ বিবাহ বলে।

 

বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ মোতাবেক, কোন ভিন্ন ধর্মী বিদেশি নাগরিক এবং বাংলাদেশী নাগরিকের মধ্যে বিয়েও এই বিশেষ বিবাহ আইন মোতাবেক হইয়া থাকে, কিন্তু এই বিবাহ কাহাদের জন্য প্রযোজ্য, বিয়ে অনুষ্ঠানের শর্তাবলি কী, সম্পাদনের পদ্ধতি কী, কার দ্বারা এই বিবাহ সম্পাদিত  হইবে, এই বিয়ের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তান কোন ধর্মের পরিচয়ে বড় হইবে, এই বিয়ের স্বামী অথবা স্ত্রী কোন ধর্ম অনুসরণ করিবেন।

 

স্পেশাল ম্যারেজ এক্টের মাধ্যমে বিবাহ এর নোটিশ ও ছেলে-মেয়ের বয়স-

বিশেষ বিবাহ আইনে বিবাহ করিতে হইলে ছেলে ও মেয়েকে অবিবাহিত থাকিতে হইবে। ছেলের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর ও মেয়ের বয়স ১৮ বছর হইতে হইবে। পক্ষগন প্রথমে বিশেষ বিবাহ নিবন্ধকের নিকট গিয়ে যে কোনো একপক্ষ অপর পক্ষের কাছে বিয়ের জন্য লিখিত নোটিশ পাঠাইবে। নিয়ম হচ্ছে, এই নোটিশ দেওয়ার ১৪ দিন পর বিবাহ সম্পাদন করিতে হইবে। একপক্ষ নিবন্ধকের মাধ্যমে বিয়ের ১৪ দিন পূর্বে অপর পক্ষকে নির্ধারিত আকারে নোটিশ না পাঠাইলে বিবাহ সম্পন্ন করা যাইবে না। বিবাহের সময় অন্তত তিনজন সাক্ষী উপস্থিত থাকিতে হইবে। পাত্র-পাত্রী সশরীরে উপস্থিত থেকে বিবাহ সম্পন্ন করিতে হইবে।  বিবাহটি অবশ্যই বিশেষ বিবাহ নিবন্ধকের উপস্থিতিতে সম্পন্ন করিতে হইবে। আইন মন্ত্রনালয় এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত অনেক স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্ট্রার আছেন, অনেক এডভোকেটও স্পেশাল ম্যারিজ রেজিস্টার হিসাবে তালিকাভুক্ত আছেন, বিবাহ সম্পাদন হইলে নিবন্ধক তাহা সরকারি ভলিউমে নিবন্ধন করিবেন ও একটি ম্যারিজ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রদান করিবেন। 

 

বিশেষ বিবাহের পূর্ব শর্তসমূহ হলফনামা করা-

ভিন্ন ধর্মের নারী-পুরুষ বিবাহ করিতে চাহিলে বাংলাদেশ এর প্রচলিত আইন Special Marriage Act, 1872 এর বিধান মোতাবেক নিম্নোক্ত শর্তসমুহ পালন করা অবশ্যক;

 

ছেলে-মেয়ে উভয় নোটারী অথবা প্রথম শ্রেণির গেজেটেড ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর উপস্থিত হইয়া এই মর্মে প্রত্যয়ণ করিবেন যে, তাহারা কেউই কোন ধর্মের অনুসারী না, অর্থাৎ তাহারা কোন ধর্মেরই রীতি-নীতি মোতাবেক নিজেদেরকে পরিচালিত করেন না। (বি:দ্র: উক্ত প্রত্যয়ন কেবল মাত্র বিশেষ বিবাহ আইন মোতাবেক বিবাহ সম্পাদন করিবার জন্যই করিতে হয়, ইহার অর্থ এই নয় যে, তাহারা কোন ধর্মের অনুসারী না অথবা চিরদিনের জন্য তাহারা তাহাদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করিতেছে।)

 

 

ছেলে-মেয়ে উভয়কে সুস্থ মস্তিস্ক ও প্রাপ্ত বয়স্ক হইতে হইবে অর্থাৎ পুরুষের ক্ষেত্রে ২১ বছর ও নারীর ক্ষেত্রে ১৮ বছর।(বি: দ্র: তবে ২১ ও ১৮ বছর সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে বিবাহ করিতে চাহিলে অভিভাবকের সম্মতি নেয়া একান্ত আবশ্যক। তবে, Gregorian Calendar অনুসারে বিবাহ সম্পাদন করিবার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে ১৮ বছর ও নারীর ক্ষেত্রে ১৪ বছর হইলে আইন মোতাবেক বিবাহটি বৈধ হইবে।)

 

বিবাহ এর পূর্বে তাহাদের কারোই স্বামী অথবা স্ত্রী বর্তমান থাকিবে না, অর্থাৎ বিবাহের সময় স্বামী অথবা স্ত্রী বর্তমান থাকিলে উক্ত আইন মোতাবেক তারা কেউই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারিবে না, রক্ত সম্পর্কিয় অথবা অন্য কোন কারনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আইনত বারিত হইবে, বিবাহের পূর্বে বিশেষ বিবাহ নিবন্ধক এর নিকট নোটিশ প্রদান করা ও নোটিশ প্রদান করার পূর্বে কমপক্ষে ১৪ দিন বিবাহ নিবন্ধক এর স্থানীয় এলাকায় তাহাদের দুজনের যে কেউ বসবাস করিতে হইবে।

 

বিশেষ বিবাহ আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ

ভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ এর বিধান মোতাবেক বিবাহ সম্পাদন হইলে, পরবর্তীতে  স্বামী-স্ত্রী উভয় যদি মনে করেন যে, উল্লেখিত বিবাহটি দীর্ঘায়ু করা তাহাদের পক্ষে সম্ভব হইতেছে না তখন তাহারা বাংলাদেশে প্রচলিত ডিভোর্স আইন মোতাবেক বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাইতে পারিবেন। এই ক্ষেত্রে পুরুষকে একচ্ছত্র অধিকার প্রদান করিলেও, নারীকেও কত গুলি কারনের মধ্য দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারিবেন।

 

বিশেষ বিবাহে আপত্তি প্রদান

নোটিশ প্রদান করার ১৪ দিন পর যে কেও দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করার মাধ্যমে বিবাহের পূর্বে এই মর্মে আপত্তি উত্থাপন করিতে পারিবেন যে, তাহাদের মধ্যে বিবাহটি সংঘটিত হইলে বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২ এ বর্ণিত শর্ত অথবা শর্ত সমুহের লঙ্গন হইবে। তবে বিবাহ বন্ধ করিবার ক্ষেত্রে আপত্তি আইনত গ্রহনীয় নয়।

 

বিশেষ বিবাহ আইনে বহু বিবাহ

কোন ব্যক্তির স্বামী অথবা স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইলে বিশেষ বিবাহ আইন মোতাবেক উক্ত বিবাহটি আইন সীদ্ধ হয়নি বলিয়া গন্য হইবে ও যাহা ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৪ এবং ৪৯৫ ধারার বিধান মোতাবেক Offence of Bigamy.

 

বিশেষ বিবাহ আইনে উত্তরাধিকারী

বিশেষ বিবাহ আইন মোতাবেক কোন বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে এবং বিবাহের পক্ষদ্বয়ের রাখিয়া যাওয়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারী আইন, ১৯২৫ এর বিধান মোতাবেক তাহাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন হইবে। তবে, তাহাদের রাখিয়া যাওয়া সম্পত্তি মৃত্যুর পূর্বে উইল অথবা টেস্টামেন্ট করিয়া গেলে উক্ত আইনের বিধানাবলী প্রযোজ্য না হয়ে এই ক্ষেত্রে উইল অথবা টেস্টামেন্টের বিধানাবলী প্রযোজ্য হইবে।

 

সুতরাং বিশেষ বিবাহ আইন মোতাবেক বিবাহ করিতে চাহিলে অবশ্যই ছেলে-মেয়েকে ভিন্ন ধর্মের হইতেই হইবে, তবেই তাহারা এই বিশেষ আইনের মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদন করিতে পারিবেন।

Post a Comment

0 Comments