এফিডেভিট বা হলফনামা কি? । এফিডেভিট বা হলফনামা কিভাবে করিবেন ? ।

এফিডেভিট বা হলফনামা কিভাবে করিবেন ?

 

এফিডেভিট বা হলফনামা কি? । এফিডেভিট বা হলফনামা কিভাবে করিবেন ? ।  এফিডেভিট বা হলফনামা করিবার নিয়ম । এফিডেভিট আইন । হলফনামা লেখার নিয়ম ।   

 

হলফনামা সম্পাদন করিবার নিয়ম-

জমি বেচা-বিক্রি, বিবাহ বা বিবাহ বিচ্ছেদ, নাম পরিবর্তন অথবা সংশোধন, পাসপোর্টের নাম সংশোধন বা মামলা মোকদ্দমাসহ নানা প্রকার কাজে প্রয়োজন হয় এফিডেভিট বা হলফনামার। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম দলিল-দস্তাবেজ তৈরির কাজেও লাগে এফিডেভিট বা হলফনামা। এফিডেভিট বা হলফনামা হচ্ছে কোনো বিষয়ে সত্যতাসহ এর সমর্থনে ঘোষণা দেওয়া, যথাযথ নিয়ম-কানুন মেনেই সম্পাদন করিতে হয় এফিডেভিট বা হলফনামা।

 

হলফনামায় যে বিষয় উল্লেখ করিতে হইবে-

১।হলফনামা হবে লিখিত। ইহাতে হলফকারীর পূর্ণ নাম, ঠিকানা, বাবা মায়ের নাম, জাতীয়তা, বয়স, পেশা ও ধর্ম উল্লেখ করিতে হইবে, এর সঙ্গে দিতে হইবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। হলফকারী ব্যক্তি কী বিষয়ে, কী কারণে বা কেন হলফ করিতেছেন তাহার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিতে হইবে।

২।কোনো জমি-জমার বিষয় নিয়ে হলফনামা হইলে জমির তফসিল উল্লেখ করিতে হইবে, বিবাহ সংক্রান্ত বিষয় হইলে  স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের নাম, বাবা ও মায়ের নাম, ঠিকানা, বয়স ও পেশা উল্লেখ করিতে হইবে। বিবাহের তারিখ, কত টাকা দেনমোহর নির্ধারণ হইয়াছে এবং দেনমোহরের কত টাকা পরিশোধ করা হইয়াছে সেটাও উল্লেখ থাকিতে হইবে। প্রয়োজনে সাক্ষীদের নাম ঠিকানাও দিতে হইবে। বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও এই সব তথ্য উল্লেখ করিতে হইবে। কী কারণে তালাক দেওয়া হইয়াছে এই বিষয়টির স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকিতে হইবে। তবে বিবাহের হলফনামায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের স্বাক্ষর লাখিবে। বিবাহ-বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে যিনি বিবাহ-বিচ্ছেদের হলফনামা করিতেছেন শুধুমাত্র তিনিই স্বাক্ষর দ্দিবেন।

৩।যে কোনো হলফনামায় অবশ্যই যে তারিখে হলফনামাটি সম্পাদন করা হইতেছে সেই তারিখটি উল্লেখ করিতে হইবে।
৪।নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয় হলে পূর্ব নাম কী ছিল এবং বর্তমান নামে কী সংশোধন হইতেছে তা স্পষ্ট করিয়া লিখিতে হইবে।
৫।হলফকারীকে হলফনামা এর সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি দিতে হইবে ও স্বাক্ষর করিতে হইবে।
৬।হলফনামা এর শেষ অংশে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শনাক্ত করিতে হইবে এবং আইনজীবীকে উল্লেখ করিতে হইবে যে এই হলফনামাটি তার সামনে সম্পন্ন করা হইয়াছে। আইনজীবীকে আইনজীবী সমিতির সদস্য নম্বরসহ হলফনামায় স্বাক্ষর করিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে যে কোনো হলফনামা করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে বিষয়ে হলফনামাটি করা হইতেছে তার সত্যতার বিষয়টি জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা।

 

কীভাবে সম্পাদন করিতে হইবে-

হলফনামা সম্পাদন করিতে হয় ২০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে, তবে বিবাহ-বিচ্ছেদের হলফনামা করিতে হইবে ৫০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে, হলফনামা লেখার পর (কম্পোজ অথবা টাইপ) নোটারি পাবলিক অথবা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সত্যায়ন করিতে হইবে। নিয়ম হচ্ছে যিনি হলফনামাটি করিলেন  তিনি নোটারি পাবলিক অথবা প্রথম শ্রেণীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁর হলফনামাটি সম্পর্কে সত্যপাঠ করিবেন। তখন নোটারি পাবলিক অথবা ম্যাজিস্ট্রেট হলফনামাটি যাচাই-বাছাই করিয়া এর উপর স্বাক্ষর দিবেন এবং একটি বিশেষ সরকারি সিল ব্যবহার করিয়া ইহাতে ক্রমিক নম্বর বসাইবেন। হলফনামাটির একটি ফটোকপি তিনি রাখিয়া দিবেন।

 

জানিয়া রাখুন-

(ক) কোনো মামলা মোকদ্দমা দায়ের করিলে ক্ষেত্র বিশেষে হলফনামা আদালতে দাখিল করিতে হয়। বিশেষ করে দেওয়ানি মোকদ্দমায় অন্তর্বর্তীকালীন কোনো প্রতিকার চাহিলে অথবা এর জবাব দিলে বিচারপ্রার্থীকে হলফনামা দিতে হয় দরখাস্তের বা জবাবের সঙ্গে। এই হলফনামায় ছবি লাগিবে না এবং আদালতের সেরেস্তাদারের সামনে স্বাক্ষর করিতে হয়। সেরেস্তাদার যাচাই-বাছাই করিবার পর আদালতে প্রেরণ করিবেন। জমি বেচা-বিক্রির দলিলের সঙ্গে দলিল নিবন্ধন এর সময় হলফনামা দিতে হয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে।

(খ) নাম সংশোধন এর ক্ষেত্রে হলফনামা করিবার পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হইবে, হলফনামা দিয়া বয়স পরিবর্তন করা যাইবে না। কোনো বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক আইন অনুযায়ী প্রথমে বিয়ে সম্পন্ন করিতে হইবে। তারপর তাঁরা ইচ্ছা করিলে হলফনামা করিয়া রাখিতে পারেন, পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ না করিয়া শুধু এই হলফনামা সম্পন্ন করা উচিত নয়, শুধু হলফনামা সম্পাদন করলেই আইন মোতাবেক বিবাহ হইয়াছে বলা যাইবে না। তালাক এর ক্ষেত্রেও পারিবারিক আইন মেনে তালাক দিতে হইবে, মুসলিম হইলে কাজির মাধ্যমে তালাকের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করিবার পরেই তালাক এর হলফনামা সম্পন্ন করা উচিত।