স্বামী বিদেশে থাকলে স্ত্রী কিভাবে তালাক দেবেন |
স্বামী বিদেশে থাকলে স্ত্রী কিভাবে তালাক দেবেন । বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার নিয়ম । স্বামীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম । একতরফা তালাক । স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিবে । কি কি কারনে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিবে ।
স্বামী বিদেশে থাকলে স্ত্রী কিভাবে তালাক দেবেন?
স্বামী দীর্ঘদিন বিদেশে আছেন। দেশে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজ খবর কিংবা ভরণ-পোষণ দেন না। উল্টো করে স্ত্রীর উপর নানা রকম অপবাদ লেপন করছে। এমতাবস্থায় স্ত্রী বিদেশে থাকা ওই স্বামীর সাথে ঘর-সংসার করতে চান না, তালাক দিতে চান। হ্যাঁ, স্ত্রী তালাক দিতে পারেন ও অন্যত্র বিয়েও করিতে পারিবেন।
বিবাহ এর কাবিননামা অথবা নিকাহনামা এর ১৮নং কলামে লেখা আছে যে স্বামী-স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছে কি-না? এ প্রশ্নের উত্তরে যদি হ্যাঁ লেখা থাকে তাহইলে স্ত্রীর পক্ষে তালাক প্রদানে কোন সমস্যা নেই। সাধারণত নিরানব্বই ভাগ কাবিননামার এই ঘরটিতে হ্যাঁ শব্দটি লেখা থাকে। সেই কারণ বিবাহের সময় নিকাহনামা এর ১৮ নং ঘরটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা এবং ঘরটি শূন্য থাকে। বিয়ে পড়ানোর সময় কাজীদের অবশ্যই দু’পক্ষকে এই ১৮ নং কলাম অথবা ঘরটি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জানানো উচিত। এই হ্যাঁ শব্দের বলে স্ত্রী তার বিদেশে থাকা স্বামীকে তালাক দিতে পারিবেন। এই তালাককে তালাক-ই-তৌফিজ বলে।
কাবিননামা এর ক্ষমতা বলে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব পালনে অপারগতার কারণে স্ত্রী নিজ নফসের প্রতি তালাক এর ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারেন এই বিষয়ে ৯ ডিএলআর ৪৫৫ পৃষ্টায় একটি কেইস উল্লেখ রহিয়াছে। এই ক্ষেত্রে যেহেতু স্ত্রী তালাক দিচ্ছেন তাই তালাক বিষয় সংক্রান্ত নোটিশ চেয়ারম্যান এর কাছে ও এর কপি স্বামীর কাছে পাঠাইতে হইবে। এখানে জানিয়ে রাখি যে, তালাক আপনি ঘরে বসেই দিতে পারিবেনন। এর জন্য কাজীর কাছে কিংবা কোর্ট-কাচারীতে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, এমনকি বিয়ের কাবিননামারও কোন দরকার নেই। স্ত্রীর দায়িত্ব তালাক ঘোষণার পর স্বামী বিদেশে যেখানে অবস্থান করছেন সেই ঠিকানায় তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেয়া। সেইসাথে স্বামীর দেশের ঠিকানাতেও নোটিশের একটি কপি পাঠিয়ে দিন। এমনকি আপনার স্বামীর দেশে থাকা পিতা-মাতা, ভাই বোন কিংবা যিনি অভিভাবক হিসেবে আছেন তালাকের বিষয় অবগত করতে তাকেও একটি নোটিশ পাঠাতে পারেন। আর আপনার স্বামীর এলাকার চেয়ারম্যানকে নোটিশ তো দিতেই হবে। এখানে চেয়ারম্যান বলতে আপনার স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা যদি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে হয় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট, পৌরসভা হলে পৌরসভার মেয়র এবং সিটি কর্পোরেশন হলে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে নোটিশ দিতে হবে। অনেকে তালাক দিয়ে তালাকের কপি চেয়ারম্যান কিংবা যাকে তালাক দেয়া হয় তাকে না পাঠিয়ে তিন মাস পরে পাঠালে তালাক কার্যকর হবে-এমন ভ্রান্ত ধারনা নিজের মনের মধ্যে লালন পালন করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা এবং আপনারা এখনও ভুলের মধ্যে রয়েছেন।
এখানে প্রশ্ন উঠিতে পারে যে, তালাকের নোটিশটি কত সময়ের মধ্যে পাঠাইতে হইবে। আইনে বলা আছে তালাক দেয়ার পর যথা শীঘ্রই সম্ভব তালাকের নোটিশ পাঠাইতে হইবে। কাজেই তালাক দিয়ে তালাকের নোটিশ নিজের কাছে অথবা ঘরের মধ্যে রাখিয়া দিলেই তালাক হইবে না। এখন জানার বিষয় হইতেছে তালাক এর নোটিশ কিভাবে লিখবেন। এর জন্য আইন নির্দিষ্ট কোনো ফরম অথবা বক্তব্য নির্ধারণ করেনি। নোটিশ লেখা কাজটি আপনি ঘরে বসে নিজেই লিখতে পারেন অথবা কোন আইনজীবীর সাহায্য নিতে পারেন। আপনি কি কারণে তালাক দিতে চান, কথা গুলো সাদা কাগজে লিখে এটাকে তালাকের নোটিশ হিসেবে পাঠাইতে পারেন। পাঠানোর কাজটি আপনি নিজেও করিতে পারেন, আবার অন্য কাউকে দিয়েও করিতে পারেন। নোটিশ পাঠানোর কাজটি ডাকযোগে রেজিষ্ট্রি করে এডি সহযোগে পাঠাইলে ভাল হয়।
চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে ৯০(নব্বই) দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো তালাক কার্যকর হইবে না। কারন নোটিশ প্রাপ্তির ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান বা মেয়র দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ অথবা সমঝোতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সালিশী পরিষদ গঠন করিয়া থাকেন। এর মধ্যে প্রতি ৩০(ত্রিশ) দিনে একটি করে মোট ৩(তিন)টি নোটিশ দেবেন তালাকদাতা তালাক গ্রহীতাকে। আপোষ-মীমাংসা হইয়া গেলে যিনি তালাক দিয়েছেন, তিনি তালাক নোটিশ প্রত্যাহার করিলে তালাক আর কার্যকর হইবে না। আর মনে রাখবেন নোটিশ পাওয়ার ৯০(নব্বই) দিন অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই যদি কেউ অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহইলে উক্ত বিয়ে অ-বৈধ বলে গণ্য হইবে। এই বিষয়ে ১৫ ডি.এল.আর পৃষ্ঠা ৯তে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। কারণ তালাক সম্পূর্ণ কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত পক্ষগন আইন সম্মত ভাবে স্বামী স্ত্রী হিসেবেই থেকে যায়। এই ৯০(নব্বই) দিন পর্যন্ত স্বামী তার স্ত্রীকে ভরণ-পোষণও দিতে বাধ্য।
আপনাকে জানিয়া রাখিতে হইবে যে, চেয়ারম্যান বা মেয়র মহোদয় কর্তৃক কোন নোটিশ পাঠানো কিংবা শালিশী পরিষদ গঠন করুক বা না করুক নোটিশ পাঠানো এবং ৯০(নব্বই) দিন অতিক্রান্ত হইলেই তালাক কার্যকর হইয়া যাইবে, এরপর আপনার পছন্দমতো কাউকে বিবাহ করিয়া ঘর-সংসার করিতে পারিবেন, আইনে কোথাও কোন বাঁধা নেই।
0 Comments
Thanks for your valuable comments, we will get back to you very soon, if necessary?