স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পাবে কি ।

স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পাবে কি ।

 

স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পাবে কি । স্ত্রী কি কি কারণে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিবে । স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম ।
স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে

স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পাবে কি । স্ত্রী কি কি কারণে তালাক দিতে পারে । স্ত্রী কিভাবে স্বামীকে তালাক দিবে । স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম ।

 

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদানের অধিকার?

 

আমাদের দেশে চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় দেখিতে পাই যে, একজন নারী বিয়ের পর তাহার সবটুকু দিয়ে পরিবারটাকে আপন করিয়া আগলে রাখিতে চায়। আ-মৃত্যু স্বামীর অবলম্বন হইয়া সংসারে ঠিকিয়া থাকিতে চায়। শত অত্যাচার নিগ্রহ নিপীড়ন নির্যাতন তথা লাঞ্ছনা সহ্য করিয়া স্বামীর সুখী সংসার প্রয়াসে বেচে থাকিবার আপ্রাণ চেস্টা করে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে উঠে না অনেক নারীর জীবনে। পুরুষ শাসিত এই সমাজে এখনো নারীদের অধিকার বাস্তবায়ন অধরা হয়েই রয়ে গেছে। “পুরুষই সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিকারী” তা এখনো অনেকের মাঝেই দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত। যাহার কারণে নারীরা পাচ্ছে না তাদের ন্যায্য অধিকার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীরা তাহাদের অধিকার প্রয়োগ করিতে অ-সচেতন বা জানিলেও নানা বাধা বিপত্তি ও ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদানের বিষয়টি। শুধু যে পুরুষ তথা স্বামী চাইলেই স্ত্রীকে তালাক দিতে পারিবে তা কিন্তু নয়। আইন মোতাবেক ক্ষেত্র বিশেষে একজন নারীও তথা স্ত্রীও কিন্তু স্বামীকে তালাক দেওয়ার অধিকার রাখেন অথবা দিতে পারেন। দেশের অধিকাংশ নারীই জানেন না তাদের এই অধিকার সম্বন্ধে অথবা জানলেও তারা বাস্তবায়ন করিতে পারেন না। স্ত্রীর কি আদৌ তালাক প্রদানের অধিকার রাখেন? বা কখন স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারেন? বা কিভাবে একজন স্ত্রী স্বামীকে তালাক তথা বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারেন? আজ আলোচনা করবো সেই সব বিষয়ে নিয়ে।

 

তালাক কী?

‘তালাক’ একটি আরবি শব্দ; যার অর্থ ভেঙে ফেলা, ছিন্ন করা, অথবা ত্যাগ করা। মুসলিম আইন মোতাবেক তালাক স্বামী স্ত্রীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধিকার। যদি স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক তথা দাম্পত্য জীবন এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষে অথবা যে কোনো একজনের পক্ষে সম্ভব নয়, তাহইলে সেই ক্ষেত্রে তাহারা উভয়েই কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন; যার একটি হলো তালাক। আইনসিদ্ধ উপায়ে বিবাহবন্ধন ছিন্ন করাকে তালাক বলে। তালাক প্রদানের ক্ষমতা অথবা অধিকার স্বামী ও স্ত্রীর সমান নয়। এই ক্ষেত্রে স্বামীর একচ্ছত্র অধিকার থাকিলেও নির্দিষ্ট কিছু আইনানুগ উপায়ে একজন স্ত্রীও তালাক প্রদান করিতে পারেন। বিবাহ বিচ্ছেদে স্ত্রীর এই অধিকারকে মুসলিম আইনে ৩(তিন) ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হইয়াছে, ১।তালাক-ই-তৌফিজ, ২।খুলা তালাক ও ৩।আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ।

তালাক-ই-তৌফিজঃ

তালাক-ই-তৌফিজ হইলো স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত তালাক প্রদানের ক্ষমতা। স্বামী যদি স্ত্রীকে বিবাহ রেজিস্ট্রির তথা কাবিন নামার ১৮ নম্বর কলামে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষমতা অর্পণ করিয়া থাকেন এবং সেই ক্ষমতার বলে স্ত্রী যদি স্বামীর নিকট থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ চান তাহইলে সেই বিচ্ছেদকে ‘তালাক-ই-তৌফিজ’ বলে। এই ক্ষেত্রে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ব্যাতিরেকেই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের ৭ ধারায় বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করিতে হয়। স্ত্রী তালাকের নোটিশ এর কপি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাইবেন ও এর এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাইবেন। নোটিশ প্রাপ্তির পরবর্তী ৯০(নব্বই) দিন পর তালাক কার্যকর হইবে। এই জন্য নিকাহনামার ১৮ নাম্বার ঘরটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়েতে প্রশ্নকারীরা কনেকে এই প্রশ্নটি করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দুই পক্ষকে এই ঘরটি সম্পর্কে অবগত করা উচিত এবং বর ও কনে পক্ষ উভয়েরও বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত। স্বামী যদি এ ঘরটি পূরণ না করেন অর্থাৎ কোনো কিছুই উল্লেখ না করেন বা কেবল সীমাবদ্ধ দু-তিনটি বা একটি ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা প্রদান করেন, তখন স্ত্রীর তালাক প্রদান করার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।  স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক প্রদানের অধিকারের আরেকটি উপায় হলো ‘খুলা’ তালাক।

খুলা তালাকঃ

খুলা হইলো স্বামী এবং স্ত্রীর আলোচনা মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ। স্বামীকে খুলার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজি করানোর দায়িত্ব হইবে স্ত্রীর। অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর নিকট হইতে হইবে। প্রয়োজনে স্ত্রী-স্বামীকে কোনো কিছুর বিনিময় প্রদান করিবেন। সাধারণত বিনিময় বা ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্ত্রী তার আর্থিক দাবির কোনো অংশ ত্যাগ করিয়া থাকেন। এই ক্ষেত্রে স্বামী রাজি থাকিলে এই ভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিতে পারে। খুলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকিলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হইবেন না; কিন্তু ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তার গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর নিকট থেকে ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকারী হইবেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন মোতাবেক এই ক্ষেত্রে প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, সেইহেতু তালাকের নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি করপোরেশন বরাবরে স্ত্রীই পাঠাইবেন।

আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদঃ

স্ত্রী যদি তালাক-ই-তৌফিজ বা খুলার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে ব্যর্থ হন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া একান্ত প্রয়োজন মনে করেন তাহইলে তাকে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত নিয়ম অনুসরণ করিতে হইবে (ধারা ২)। সেই আইনে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে যে কোন কোন কারণে একজন স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করিতে পারিবেন। এই ক্ষেত্রে স্ত্রীকে পারিবারিক আদালতে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তালাকের জন্য আবেদন করিতে হইবে। আদালতের ডিক্রিমূলে তখন স্ত্রীর তালাক কার্যকর হইবে। আইন অনুযায়ী স্ত্রী যেই সব কারণে আদালতে তালাক চাইতে পারিবেন সেই গুলো হইল;

১) ৪(চার) বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকিলে।

২) ২(দুই) বছর স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হইলে।

৩) স্বামীর ৭(সাত) বছর বা তার চেয়ে বেশি কারাদ হইলে।

৪) স্বামী কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ৩(তিন) বছ যাবত দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে।

৫) বিবাহের সময় পুরষত্বহীন থাকিলে এবং তা মামলা দায়ের করা পর্যন্ত বজায় থাকিলে।

৬) স্বামী ২(দুই) বছর ধরিয়া অপ্রকৃতিস্থ অথবা পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠরোগে অথবা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকিলে।

৭) বিবাহ অ-স্বীকার করিলে। অর্থাৎ যদি কোনো মেয়ের বাবা অথবা অভিভাবক মেয়েকে ১৮ বছর বয়স হওয়ার পূর্বে বিবাহ দেন এবং সেই মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার পূর্বে বিবাহ অস্বীকার করে বিবাহ ভেঙে দিতে পারেন। তবে শর্ত হলো, মেয়েটির সঙ্গে স্বামীর দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস) যদি স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনই কেবল বিবাহ অ-স্বীকার করিয়া আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি চাওয়া যাইবে।

৮) স্বামী একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করিলে। অর্থাৎ স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লঙ্ঘন করিয়া একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করিলে।

৯) স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে। নিম্নলিখিত আচরণগুলো ‘নিষ্ঠুরতা’ হিসেবে গণ্য হবে। (ক) অভ্যাসগত আচরনে স্ত্রীকে আঘাত করা, (দৈহিক আঘাত ছাড়াও মানসিক আঘাতও এর অন্তর্ভুক্ত, যাহা তার জীবন শোচনীয় অথবা দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াছে), (খ) অন্য কোনো খারাপ নারীর সঙ্গে জীবন যাপন অথবা মেলামেশা, (গ) স্ত্রীকে অ-নৈতিক জীবন যাপনে বাধ্য করা, (ঘ) স্ত্রীর সম্পত্তি নষ্ট করা, (ঙ) স্ত্রীকে নিজস্ব ধর্মপালনে বাধা দেওয়া, (চ) যদি স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে, তাদের সঙ্গে পবিত্র কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক সমান ব্যবহার না করা, (ছ) এছাড়াও মুসলিম আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বৈধ বলে স্বীকৃত অন্য যে কোনো কারণে স্ত্রী পারিবারি আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি করিতে পারিবেন।

ওপরে যে কোনো এক অথবা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদ এর আবেদন করিতে পারেন। অভিযোগ প্রমাণের দায়িত্ব স্ত্রীর। অভিযোগ প্রমাণিত হইলে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদ এর পক্ষে ডিক্রি পাইতে পারেন। যদি আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রি দেয় তাহইলে তার পরের সাতদিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউপি/ পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান অথবা মেয়রের কাছে পাঠাইবেন। স্বামীর অবস্থান জানা না থাকিলে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ এর ধারা ৩ মোতাবেক তার উত্তরাধিকারদের নিকট নোটিশ দিতে হইবে।

 ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ মোতাবেক তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নিবেন ও চেয়ারম্যান যেই দিন নোটিশটি পাইবেন সেই দিন হইতে ঠিক ৯০(নব্বই) দিন পর তালাক চূড়ান্ত ভাবে কার্যকর হইবে। গর্ভাবস্থায় বিবাহ-বিচ্ছেদ হইলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হইবে না, এই ক্ষেত্রে ৯০(নব্বই) দিন ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মধ্যে যেই দিনটি পরে হইবে সেই দিন হইতে তালাক কার্যকর হইবে, আর স্ত্রী যদি গর্ভবতী থকেন তাহা হইলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হইবে না। 

 স্ত্রী তালাক দিলেও কি মোহরানা পাইবে? 

স্ত্রী তালাক দিলেও মোহরানার টাকা তাকে দিতে হইবে ও তালাক কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ভরণ-পোষণ করিতে হইবে। তবে দাম্পত্য মিলন না ঘটিলে ও মোহরানা সুনির্দিষ্ট করা না হইয়া থকিলে স্ত্রী মোহরানার অর্ধেক এর অধিকারী হইবেন। ১৯৩৯ আইনের ৫ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হইয়াছে যে, এই আইন এর কোনো কিছুই কোনো বিবাহিত নারীর বিবাহ-বিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইন মোতাবেক তার দেনমোহর অথবা এর কোনো অংশের ওপর কোনো অধিকারকেই প্রভাবিত করিবে না।

Post a Comment

0 Comments