কাবিননামা বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কি বিবাহ অবৈধ? |
কাবিননামা বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কি বিবাহ অবৈধ? । বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম । অনলাইনে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই । বিবাহ রেজিস্ট্রেশন যাচাই করার নিয়ম । বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে কি কি লাগবে ।
কাবিননামা বা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কি বিবাহ অবৈধ?
বিবাহ
রেজিষ্ট্রেশন করিবার বিধানটি ইসলামিক শরীয়া আইন থেকে উদ্ভূত নয়, এটি একটি বিধিবদ্ধ
রাষ্ট্রীয় আইন। বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের বিধানটি করা হইয়াছে মূলত কয়েকটি উদ্দেশ্য-
১.বাল্যবিবাহ রোধ করা
২.স্ত্রীর অধিকারের আইনি স্বীকৃতি প্রদান
৩.পিতৃত্বের পরিচয় ও বৈধতা নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ এর ৩ ধারা মোতাবেক বাংলাদেশে প্রত্যেকটি
বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। মুসলিম বিবাহ ও তালাক(রেজিষ্ট্রেশন)
আইন, ১৯৭৪ এর ৫ ধারা অনুযায়ী বিবাহ সম্পাদনের পর তাৎক্ষণিক অথবা ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্য বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক, বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন না করা হইলে সেইটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ
হিসেবে গণ্য করা হয়। কেউ বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন না করিলে উক্ত অপরাধের শাস্তি হচ্ছে
সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর কারাদণ্ড অথবা ৩০০০ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয়। পারিবারিক আদালত
অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ এর ৫ ধারা প্রয়োগ এর ক্ষেত্রেও বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করিবার বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে, বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন না করা হইলে বিবাহ সম্পাদন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক হইতে উদ্ভূত
অধিকার এবং এর কর্তব্যগুলোর ক্ষেত্রে সন্দেহ এর অবকাশ সৃষ্টি হয়।
এখন প্রশ্ন কাবিনানামা না থাকিলে অথবা
বিবাব রেজিষ্ট্রেশন করা না হইলে বিবাহ অবৈধ বলিয়া গণ্য হইবে কিনা?
এটা উত্তর হচ্ছে শরীয়া আইনের অন্যান্য শর্ত পূরণ করে বিয়ে সম্পূর্ণ হলে, বিয়ে
নন-রেজিস্ট্রেশনের কারনে বিয়ে অবৈধ হবে না। তবে নন-রেজিস্ট্রেশনের কারনে বিয়ে
হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
এই ক্ষেত্রে মোঃ চান মিয়া বনাম রূপনাহার ৫১ ডিএলআর ১৯৯৯ (HCD) 292 মামলায় হাইকোর্টের
অভিমত প্রণিধানযোগ্য, উল্লেখিত মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেয় যে, অন্যকোন ভাবে বিয়ে বৈধ
হলে, কাবিননামা না থাকিলে অথবা বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন না হইলে উক্ত বিবাহ অ-বৈধ বলে গণ্য
হইবে না। অর্থাৎ শরীয়া আইনের অন্যান্য শর্ত পূরণ করা হইলে বিবাহ বৈধ এবং বিবাহ নন-রেজিষ্ট্রেশনের কারনে অ-বৈধ হইবে না।
ডা. এ আই এম আবদুল্লাহ বনাম রোকেয়া খাতুন ২১ ডিএলআর ২১৩ মামলায় হাইকোর্ট রায় দেন যে, বিবাহ নন-রেজিস্ট্রেশন বিবাহের বৈধতাকে আঘাত করে না, কিন্তু বিবাহের নন-রেজিস্ট্রেশন বিবাহ নিয়ে সন্দেহ এর উদ্রেক সৃষ্টি করে।
সুতরাং বলা যায়, কাবিননামা না থাকলে বা বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা না হলে উক্ত বিয়ে অবৈধ নয়।শরীয়া আইন অনুযায়ী কাবিননামা অত্যাবশকীয় উপাদান নয় বিধায় এটির অনুপস্থিতর কারনে বিয়ে অনিয়মিতও হয় না। তবে কাবিননামা না থাকলে বিয়ে আসলে হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে।
এখন অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে, কাবিননামা না থাকলে তখন কিভাবে বিয়ে প্রমাণ করা যাবে?
বিবাহ যে হইয়াছে সেইটার সুনির্দিষ্ট এবং সুনিশ্চিত প্রমাণ হইতেছে কাবিননামা। এখন কেউ যদি দাবী করে যে, তার বিবাহ হইয়াছে কিন্তু কাবিননামা নেই৷ সেই ক্ষেত্রে বিবাহ হইয়াছে সেটা প্রমানের ভার তার উপর। এই ক্ষেত্রে বিবাহের শর্তসমূহ পূরণ হইয়াছে অথবা বিবাহ হইয়াছে তার স্বপক্ষে তাকে সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করিতে হইবে। আনোয়ার হোসেন বনাম মমতাজ বেগম ৫১ ডিএলআর (HCD) 444 মামলায় হাইকোর্ট আন-রেজিষ্টার্ড বিবাহেরক্ষেত্রে ডিএফ মোল্লার ২৫২ নং প্যারাগ্রাফেএ উল্লিখিত বিবাহের অত্যাবশকীয় উপাদান গুলো সাক্ষ্য দিয়ে সুস্পষ্ঠভাবে প্রমাণের কথা উল্লেখ করেন। ইজাব, কবুল এবং বিবাহ এর সাক্ষীর উপস্থিতি যদি সাক্ষ্য দিয়ে প্রমাণ করা যায়, তাহইলে বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করা না হইলেও উক্ত বিবাহ বৈধ।
দীর্ঘ সময় ধরিয়া চলমান লিভ-টু-গেদারকে কি বিবাহ হিসাবে প্রমাণ করা যাইবে কিনা অথবা গণ্য হইবে কিনা?
এক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে না। কাবিননামা না থাকার কারনে, কেউ যদি বলে- তারা দীর্ঘদিন একসাথে থাকে বা লিভ টুগেদার করে। এই একসাথে থাকা বা লিভ টুগেদার বিয়ের প্রমাণ নয় এবং কাবিননামা কে এটা দিয়ে খন্ডন করা যাবে না।কাবিননামার অনুপস্থিতিতে বিয়ে প্রমাণের জন্য তাকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে শরীয়তের শর্তসমূহ- প্রস্তাব প্রদান ও প্রস্তাবে সম্মতি বা কবুল, পক্ষদের স্বাধীন সম্মতি এবং সাক্ষীর উপস্থিতি।সুতরাং বলা যায়, কাবিননামা না থাকলে বা বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করলে বিয়ে অবৈধও হয়না, অনিয়মিতও হয়না। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন না করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
0 Comments
Thanks for your valuable comments, we will get back to you very soon, if necessary?