মিথ্যা মামলা হইলে কী করবেন |
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার । নারী নির্যাতন মিথ্যা মামলার শাস্তি । নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা । কাউন্টার মামলা কি । মিথ্যা চার্জশিট ।
মিথ্যা মামলা হইলে কী করবেন?
সমাজে মিথ্যা বা তুচ্ছ মামলা দায়েরের মাধ্যমে নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করিবার ঘটনা অনেক দেখা যায়। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে উদ্দেশে প্রতিপক্ষকে প্রায়ই সামাজিক এবং আর্থিকভাবে হয়রানি করিবার ঘটনা ঘটাতে দেখা যায়। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করিয়া, এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা করা হইয়া থাকে, যেমন যৌতুক বা ভরনপোষন বা খোরপোষ বা তালাক ইত্যাদি বিষয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়া স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সংসার জীবন বিপন্ন করে তোলা হইয়া থাকে।
বেশির ভাগ সময় প্রেমের বিবাহকে কেন্দ্র করিয়া নারী অপহরণ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন
মামলা দায়ের করা হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন
দমন আইনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ
মামলাই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক
উদ্দেশ্যে দায়ের করার ঘটনা
ঘটে, কিন্তু মিথ্যা মামলার
শিকার হইলে আইন মোতাবেক মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মামলা চলমান সময়ে যা করতে হবে?
যদি কেউ মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান, তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়া মামলাটি চালিয়ে যাইতে হইবে। যদি দলিলপত্র এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা হইতে পালিয়ে থাকা মটেও বুদ্ধিমানের কাজ না।ইহাতে আপনার অনুপস্থিতিতেই সাজা হইয়া যাইতে পারে। তবে ফৌজদারি মামলায় জামিন সংক্রান্ত বিষয় জড়িত থাকে। জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হইতে পারে এবং মামলা যদি মিথ্যা হয় রেহাই মিলবে। যদি থানায় মামলা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে যথাযথ সত্যতাসহ যাবতীয় দলিল-দস্তাবেজ উপস্থাপন করিতে হইবে। পুলিশ ইচ্ছা করিলে গ্রেপ্তার না করিয়াও মামলার সংক্রান্ত বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করিতে পারেন।
যদি পুলিশ গ্রেপ্তার করিয়া আদালতে চালান দেয়, সেই ক্ষেত্রে জামিনের আবেদন করিতে হইবে। পরবর্তী সময়ে অভিযোগ গঠনের দিন মামলা হতে অব্যাহতির আবেদন করিতে হইবে। নিম্ন আদালতে হতে অব্যাহতি না পাইলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ রহিয়াছে। যদি আদালতে সরাসরি মামলা হয়, তাহলেও আত্মসমর্পণ করিয়া জামিন চাইতে হইবে এবং পরবর্তী সময়ে মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাইতে হইবে। মামলা সাক্ষ্য পর্যায়ে গেলে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করিতে হইবে। মামলার অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ করার দায়িত্ব যিনি মামলা করেন তাঁর ওপর বর্তায়। অনেক সময় মিথ্যা মামলা হলে মামলাকারী মামলা দায়ের করার পর আর হাজির হন না। সেই ক্ষেত্রে কয়েকটি তারিখ যাওয়ার পর মামলা থেকে খালাস পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ আইনে রয়েছে। মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে অবশ্যই মিথ্যা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা আপনি গ্রহণ করতে পারেন।
আছে শাস্তির বিধান?
ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫০ ধারা মোতাবেক মিথ্যা
অভিযোগের শাস্তির বিধান রহিয়াছে। ম্যাজিস্ট্রেট
যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময়
প্রমান পান যে, মামলাটি
মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক, তাহলে
ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর
নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।
দণ্ডবিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারা মোতাবেক মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের জন্য শাস্তি সর্বোচ্চ ৭(সাত) বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের কথা উল্লেখ রহিয়াছে এবং দণ্ডবিধির ২০৯ ধারা মোতাবেক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিলে সর্বোচ্চ ২(দুই) বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইতে হইবে।
দণ্ডবিধির ২১১ ধারা মোতাবেক মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করিবার শাস্তির ক্ষেত্রে বলা হইয়াছে যে, কোনো ব্যক্তি ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে কোনো অভিযোগ দায়ের করিলে বা কোনো অপরাধ সংঘটিত করিয়াছে মর্মে মিথ্যা মামলা দায়ের করিলে মামলা দায়েরকারীকে ২(দুই) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করারও বিধান রহিয়াছে। তবে অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় যদি এমন হয় যে, যার কারন মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন বা ৭(সাত) বছরের উপর সাজা হইবার হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তাহইলে দায়ী অভিযোগকারীর সর্বোচ্চ ৭(সাত) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইতে পারে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা দায়ের করার শাস্তির কথা উল্লেখ রহিয়াছে। এখানে উল্লেখ করা হইয়াছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারন নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন বা করান, তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক ৭(সাত) বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবেন।
0 Comments
Thanks for your valuable comments, we will get back to you very soon, if necessary?