বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার |
বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার । বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার কয়টি । বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার কয়টি ।
সংবিধানে এর মৌলিক অধিকার কোনগুলো?
সমাজে মর্যাদাপূর্ণভাবে বাঁচিয়া থাকিতে হইলে একজন মানুষের যেইসব অধিকার দরকার, সেইগুলো মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত হইবে। একটি রাষ্ট্রের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এইসবের মধ্য থেকে কিছু অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করিয়া সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে, এই মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হইলে রাষ্ট্র প্রতিকার দিতে বাধ্য থাকিবে।
সংক্ষেপে বলিতে গেলে, মানবাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার, আর এই মৌলিক অধিকার হলো আইনিভাবে স্বীকৃত।
বাংলাদেশের সংবিধানে এর মৌলিক অধিকার-
প্রত্যেকটি দেশের সংবিধানেই মৌলিক
অধিকার এর বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রহিয়াছে, বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩য় ভাগে মৌলিক
অধিকার এর বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
করা হইয়াছে।
বাংলাদেশ এর সংবিধানের ২৬ হইতে ৪৭(ক) অনুচ্ছেদ গুলো মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট, ৩য় ভাগের শুরুতে অর্থাৎ ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা হইয়াছে, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অ-সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাইবে না। আর যদি করা হয় তবে তা বাতিল হইয়া যাইবে। সরকার অথবা মন্ত্রিপরিষদ ইচ্ছা করলেই মৌলিক অধিকার পরিপন্থী আইন তৈরি করিয়া এর ব্যত্যয় ঘটাইটে পারিবে না ।
আইনের দৃষ্টিতে সমতা-
বাংলাদেশ এর সংবিধানের ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে
বিদ্যমান আইনে নাগরিকদের কীভাবে
দেখা হইবে, সেই বিষয়ে
বলা হইয়াছে। এই অনুচ্ছেদে
বলা হইয়াছে যে, আইনের দৃষ্টিতে
প্রতিটি নাগরিকই সমান।
অবস্থানগত কারণে বৈষম্য-
ধর্ম বা বর্ণ বা লিঙ্গ বা বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোনো
নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাইবে না, মৌলিক এই
অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ এর সংবিধানের ২৮
নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে।
সরকারি চাকরিতে অধিকার-
বাংলাদেশ এর সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সরকারি
চাকরিতে সবার সমান সুযোগ থাকিবে বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে।
আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার-
রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিক এর আইন এর আশ্রয় লাভের অধিকার রহিয়াছে বলে উল্লেখ করিয়া সংবিধানের ৩১ ও ৩২
নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে, সুস্পষ্ট
কারণ ছাড়া কোনো নাগরিকের
বিরুদ্ধে এমন কোনো ব্যবস্থা
নেওয়া যাইবে না যাহাতে তাহার জীবন বা স্বাধীনতা বা দেহ বা সুনাম বা সম্পদের ক্ষতি সাধন হইবে।
বিনা বিচারে আটক-
কোনো ব্যক্তিকে আটক করা নিয়ে
নির্দেশনা রহিয়াছে বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩৩ নম্বর
অনুচ্ছেদে। ইহাতে বলা হইয়াছে যে, বিনা কারণে কাউকে আটক
করা যাইবে না, কোনো
কারণে কাউকে আটক করা হইলে, সেটির কারন জানিয়ে
যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের
সুযোগ দিতে হইবে। কোনো
অবস্থায় তাকে ২৪(চব্বিশ) ঘণ্টার
বেশি সময় হাজতে রাখা যাইবে না, তাহার আটকের ২৪(চব্বিশ)
ঘণ্টার মধ্যে পার্শ্ববর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের
এর কাছে আটক ব্যক্তিকে হাজির করিয়া যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে।
জোরপূর্বক শ্রম-
ফৌজদারি অপরাধ এর সাজাপ্রাপ্ত আসামি না হইলে বা জনগণ এর বৃহৎ স্বার্থে
আবশ্যক না হইলে কাউকে
জোর করিয়া কোনো কাজ
করানো যাইবে না । এ
বিষয়টি বলা হইয়াছে বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩৪
নম্বর অনুচ্ছেদে।
বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ-
কেউ কোনো অপরাধ করিলে তাহার বিচার অবশ্যই ওই
সময়ে প্রচলিত আইনে করিতে হইবে বলিয়া বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদে
বলা হইয়াছে, একটি অপরাধের
জন্য একাধিকবার শাস্তি দেওয়া যাইবে না ।
এই অনুচ্ছেদ মোতাবেক, প্রত্যেকটি নাগরিক এর স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ বিচারের অধিকার রহিয়াছে। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাইবে না এবং নিষ্ঠুর বা অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না ।
সমাবেশ, সংঘটন ও চলাফেরার স্বাধীনতা-
জনস্বার্থে আইন এর মাধ্যমে আরোপিত
যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধ ছাড়া দেশের যে কোনো
স্থানে অবাধ চলাফেরার, দেশত্যাগ
ও পুনঃপ্রবেশের স্বাধীনতা রহিয়াছে প্রত্যেক নাগরিকদের। বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩৬,
৩৭ ও ৩৮ নম্বর
অনুচ্ছেদে বিষয়গুলোর উল্লেখ করা হইয়াছে, এই অনুচ্ছেদগুলোতে জনস্বাস্থ্য এবং জনশৃঙ্খলার প্রতি
গুরুত্ব দিয়া যেকোনো সমাবেশ
অথবা সংগঠনের অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকেরই রহিয়াছে বলে জানানো হইয়াছ।
চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা-
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে
আইনের মাধ্যমে যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেকটি নাগরিকের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতা রহিয়াছে। বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে
বিষয়টির উল্লেখ করা হইয়াছে ।
ইহাতে বলা হইয়াছে যে, সংবাদ ক্ষেত্র গুলোতেও
এ স্বাধীনতা দেওয়া হইয়াছে।
পেশা নির্বাচনের স্বাধীনতা-
যে কোনো নাগরিক আইন অনুযায়ী
যে কোনো কাজকে নিজের পেশা
হিসেবে বাছাই করতে পারবে
বলে বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদে
উল্লেখ করা হইয়াছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা-
প্রত্যেকটি নাগরিক এর নিজের ধর্ম
পালন করিবার স্বাধীনতা থাকিবে বলিয়া বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৪১
নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে। ইহাতে বলা হয়েছে যে, কাউকে জবরদস্তি করিয়া কোনো ধর্ম পালনে
অথবা পাঠদানে বাধ্য করা যাইবে না।
সম্পত্তির অধিকার-
আইন এর মাধ্যমে আরোপিত বাধা-নিষেধ
সাপেক্ষে প্রতিটি নাগরিক এর সম্পত্তি অর্জন করতে,
ধারন করতে, হস্তান্তর করতে পারিবে বলিয়া বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৪২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হইয়াছে।
গৃহ ও যোগাযোগের অধিকার-
রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলার স্বার্থে আইন এর মাধ্যমে আরোপিত
বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রতিটি
নাগরিক এর নিজ গৃহে নিরাপত্তা
লাভের অধিকার থাকিবে, বাংলাদেশ এর সংবিধানের ৪৩
নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টির উল্লেখ করিয়া বলা হইয়াছে, নাগরিকদের চিঠিপত্র এবং যোগাযোগ এর গোপনীয়তা
রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
মৌলিক অধিকার ভঙ্গ হইলে করণীয়-
যে কোনো কারণে মৌলিক
অধিকার ভঙ্গ হইতে পারে।
এই ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বাংলাদেশ এর সংবিধানের ১০২(১) নম্বর
অনুচ্ছেদ মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন এর মাধ্যমে অধিকার পুনরুদ্ধার করিতে পারিবেন।
0 Comments
Thanks for your valuable comments, we will get back to you very soon, if necessary?