মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা কে পাইবেন? |
নমিনির টাকা তোলার নিয়ম । মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে জমানো টাকা কে পাইবেন । মৃত ব্যক্তির সঞ্চয়পত্র কে পাইবেন । ব্যাংক-নমিনি আইন-২০২০ । মৃত ব্যক্তির ব্যাংকে টাকা ওয়ারিশদের মাঝে কিভাবে বন্টন হইবে ।
মৃত ব্যক্তির টাকা নমিনি নয়, পাইবে উত্তরাধিকারী?
যদি কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংকে অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখিয়া মারা যান, তাহলে পরবর্তী সময়ে এই টাকার মালিক কে হইবেন? মৃত ব্যক্তির রাখিয়া যাওয়া টাকা-পয়সা কীভাবে বণ্টন করা হইবে, কাহারা পাইবেন?, কীভাবে পাইবেন?, এই বিষয় গুলি অনেকের নিকট অজানা, আবার অনেক সময় সঠিক তথ্য না জানা থাকার কারণে রেখে যাওয়া টাকা-পয়সা থেকে বঞ্চিত হতে হয় প্রকৃত হকদারকে।
কারা পাইবেন?
মৃত ব্যক্তি যদি মুসলিম হইয়া থাকেন, তাহলে মুসলিম আইন মোতাবেক তাহার রাখিয়া যাওয়া টাকার ভাগ হইবে। মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা এ টাকার মালিক হইবেন। মুসলিম আইনে মোতাবেক যেভাবে সম্পত্তি ভাগ হইবার কথা বলা হইয়াছে, ঠিক সেই ভাবেই মৃত ব্যক্তির রাখিয়া যাওয়া টাকা-পয়সা ভাগ হইবে। কোনো উত্তরাধিকারীকে অন্য উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত করিতে পারিবেন না। আইন মোতাবেক এই টাকাও একটি সম্পত্তি। তাই এর ভাগ বাটোয়ারাও হইবে জমি-জমার মতোই, তাই এই সম্পর্কে কোনো রকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব করা উচিত নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যে নিজ নিজ পারিবারিক আইন মোতাবেক মৃত ব্যক্তির টাকার ভাগ-বাটোয়ারা হইবে।
যদি নমিনি করা থাকে?
যদি মৃত হিসাবধারী কোনো ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের কোনো নমিনি করিয়া দিয়া থাকেন, তাহলে সেই নমিনি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করিতে পারিবেন। এত দিন এটাই ধরা হতো, মৃত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের মনোনীত নমিনিই টাকার একমাত্র প্রকৃত মালিক হইবে, কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগ এই বিষয়ে একটি রায় দিয়েছেন যে, সঞ্চয়পত্রের অ্যাকাউন্টধারী মারা গেলে সেই অ্যাকাউন্টের টাকা নমিনির পরিবর্তে হিসাবধারীর উত্তরাধিকারীরা পাইবেন বলিয়া রায় দিয়াছেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমদে চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ, এই সংক্রান্ত মামলার আইনজীবীদের বক্তব্যমতে, হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের ফলে সঞ্চয়ের টাকা নমিনি মাত্র উত্তোলন করতে পারবেন। তবে এই টাকার প্রকৃত মালিক নমিনি হবেন না। প্রকৃত মালিক হবেন অ্যাকাউন্টধারীর উত্তরাধিকারী।
লাগতে পারে উত্তরাধিকার সনদ?
অনেক সময় নমিনি করা থাকিলেও কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা উত্তোলন করিবার জন্য আদালত এর উত্তরাধিকার সনদ চাহিতে পারেন, আর যদি নমিনি কাউকে করা না থাকে, তাহলে আদালত এর এই সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়, মৃত ব্যক্তির হিসাবের টাকা তুলিবার জন্য জেলা জজ আদালতে বা জেলা জজের মনোনীত অন্য কোনো আদালত হইতে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এই উত্তরাধিকারসনদ তুলতে হয়, এই জন্য ঢাকার ৩য় যুগ্ম জেলা জজ আদালতকে এ সনদ সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিষ্পত্তির এখতিয়ার দেওয়া হইয়াছে। মৃত ব্যক্তির বৈধ উত্তরাধিকারীরা প্রত্যেকে বা তাঁদের পক্ষে যিনি টাকা তুলবেন, তাঁকে আদালতে বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি দাখিল করিতে হইবে।
বিজ্ঞ আদালতে আরজির সঙ্গে হলফনামা দিতে হবে, হলফনামায় উল্লেখ করিতে হইবে যে, তিনি মৃত ব্যক্তির সম্পর্কে কী হন?, মৃত ব্যক্তির এই টাকা কাউকে দান অথবা উইল করিয়া যাননি?, উইলের জন্য কোনো প্রবেট বা লেটার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর দরখাস্ত দাখিল করিয়া যাননি এবং তাকে অন্য উত্তরাধিকারীরা টাকা তোলার ক্ষমতা দান করিয়াছেন মর্মে উল্লেখ থকিতে হইবে। এর সাথে মৃত ব্যক্তির হিসাব বিবরণী, মৃত সনদপত্র ও সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা হইতে ওয়ারিশান সনদ দিতে হইবে। আরজিতে মৃত ব্যক্তির টাকার হিসাবের একটি বিবরণ তফসিল আকারে দিতে হইবে। টাকার পরিমাণ ২০(বিশ হাজার) এর নিচে হলে কোর্ট ফি দিতে হবে না, আর এর উপর হইলে কোর্ট ফি দিতে হবে।
0 Comments
Thanks for your valuable comments, we will get back to you very soon, if necessary?